সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতা বিনিময় অনুষ্ঠান
গত ০৪ মার্চ ২০১৮ ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের বৃত্তিপ্রাপ্ত ‘সামাজিক উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রম’ কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি তে ‘সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার্থী অভিজ্ঞতা বিনিময় অনুষ্ঠানের’ আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশ এর সভাপতি জনাব এ. কে. আজাদ এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম মাকসুদ কামাল।
রাজশাহী অঞ্চলে আমরা তিনটি বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দিতে পেরেছি। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া একঝাঁক শিশুকে আবারও পড়াশোনা কিভাবে শুরু করা যাবে, দিয়েছি সেই পরামর্শ। আমাদের উৎসাহে মাগুরায় মাদক বিক্রি নিষিদ্ধে সক্রিয় উদ্যোগের প্রকাশ্য ঘোষণা দেন একজন জনপ্রতিনিধি। কোনো ধর্মেই যে জঙ্গিবাদের স্থান নেই- সে ব্যাপারেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাণখোলা আলাপ হয়েছে।
এভাবেই নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পরিচালিত ‘সামাজিক উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রম’ ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আর্থিক সহযোগিতায় নিজেদের পারিবারিক অসচ্ছলতাকে জয় করে মেধার সর্বোচ্চ বিকাশে পরিশ্রম করে চলেছেন তারা। পাশাপাশি সম্পৃক্ত হয়েছেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের লক্ষ্যে গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পরিচালিত প্রচার কার্যক্রমেও। গত ০৪ মার্চ ২০১৮ রোববার ঢাবির টিএসসি মিলনায়তনে ’সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার্থী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সেই কার্যক্রমে পাওয়া অভিজ্ঞতাই বিনিময় করেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন “শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য বৃত্তি” এই অঙ্গীকার নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ৭০৪ জন অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে আগামী ৪ বছরের জন্য প্রতি মাসে প্রত্যেককে ২,৫০০ টাকা করে বৃত্তি প্রদান করে যাচ্ছে। বৃত্তির পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এ বছর বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘সামাজিক উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রম’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটিতে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ২০ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী এবং এলাকার যুব সমাজের মাঝে তাদের এই সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ৬০টি জেলার মোট অংশগ্রহণকারী ৬১০ জন (ছেলে ৩৮৭ এবং মেয়ে ২২৩) শিক্ষার্থী ১৬৩ টি গ্রুপে ভাগ হয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে।
শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা শোনার পর প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ বলেন, সাবেক ও বর্তমান প্রত্যেক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকজন দূত। তাই অ্যালামনাইদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক এবং বাল্যবিয়ে রোধের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক ইতিহাস জানানোর বিষয়ে সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে এ. কে. আজাদ বলেন, সামাজিক পরিবর্তনে স্বেচ্ছা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা অসাধ্য সাধন করেছে। তাদের অভিজ্ঞতা সবার জন্যই শিক্ষণীয়। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজনকে ‘অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড ফর সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিস’ প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ৈর টিএসসিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে দেশের বিশিষ্ট এ উদ্যোক্তা বলেন, বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাইরা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখানকার অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মাদক, বাল্য বিয়ে, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং একেকটি সামাজিক ক্ষত। এসবের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই।
অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা, অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ। অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দসহ অতিথিদের মধ্যে এ সময় মঞ্চে আর উপস্থিত ছিলেন মুনিরা খান, সেলিনা খালেক, মাহফুজা রহমান চৌধুরী বাবলী, শবনম শাহনাজ চৌধুরী প্রমুখ।