ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে শতবর্ষের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

অত্যন্ত আনন্দ উল্লাসে গত ১২ মার্চ ২০২২ উদ্যাপিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’। ‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রায় ১২,০০০ সম্মানিত সদস্যের উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী মতিউল ইসলাম, বিশেষ অতিথি  শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির চেয়ারম্যান জনাব সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয়  প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. মাকসুদ কামাল,  প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সম্মানিত সভাপতি এ. কে. আজাদ।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়ানোর মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী মো. মতিউল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. মাকসুদ কামাল, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পতাকা উত্তোলন করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি জনাব এ. কে. আজাদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার, মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির চেয়ারম্যান জনাব সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সহ-সভাপতি জনাব আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজসহ ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ।

উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল সম্মানিত অ্যালামনাইগণ বেলুন উড়িয়ে আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একে-অপরকে বরণ করে নেন।

এরপর শত শিল্পীর লাইভ অর্কেস্ট্রা, সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মোড়ক উম্মোচন ও ‘শিল্পীর রং তুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়।

শতবর্ষের মিলনমেলায় ‘রং তুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক কর্মসূচিতে ১০০জন চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিল। এছাড়া শতবর্ষের স্মারকগ্রন্থ সহ অন্যান্য প্রকাশনাগুলো অ্যালামনাইদের মাঝে বিক্রয়ের ব্যবস্থা ছিলো। সম্মানিত অ্যালামনাইদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে একটি মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়েছিল। যাতে কোনো অ্যালামনাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী অ্যালামনাইদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা, আপ্যায়ন ও পর্যাপ্ত সেনিটেশন-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।

শতবর্ষের মিলনমেলায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্মানিত অ্যালামনাইগণ তাঁদের পুরনো দিনের স্মৃতি স্মরণ করেন এবং একে অপরকে তা সহভাগিতা করেন। শতবর্ষের মিলনমেলার মূল আকর্ষণ ছিলো জাকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্র, নজরুল ও হারানো দিনের গান পরিবেশন করেন অদিতি মহসীন, প্রিয়াংকা গোপ ও হৈমন্তী রক্ষিত। ৬০ ও ৭০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের গান নিয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন চাঁদনি, সিনথিয়া, মিম চৌধুরী ও তাঁদের দল। আধুনিক ও পুরানো দিনের গান পরিবেশনা করেন জনপ্রিয় শিল্পী সামিনা চৌধুরী ও সন্দীপন। প্রেমা ও তাঁর দলের অংশগ্রহণে পরিবেশন করা হয় আকর্ষণীয় রায়বেশি নৃত্য। এরপর সবথেকে বড় আকর্ষণ ছিল জনপ্রিয় ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন-এর একক পরিবেশনা। বর্তমান প্রজন্মের শিল্পী নিশীতা বড়য়া-এর সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

শতবর্ষে এসে শিক্ষার গুণগত মান ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান প্রশাসন একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করেছেন।

আমাদের পূর্বসূরি শ্রদ্ধেয় অ্যালামনাইদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণে সৃষ্টি বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণকামী উন্নত সম্বৃদ্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বর্তমান প্রজন্মকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যার যার অবস্থান থেকে শ্রদ্ধেয় অ্যালামনাইবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও বিভাগীয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন একটি পরিবার হয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাতৃসম অ্যালমা মেটার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা তা মোচনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের উদ্যোগ আরো বেগবান এবং কার্যকর হবে, শতবর্ষে দাঁড়িয়ে এই প্রত্যাশা করার মধ্য দিয়ে শতবর্ষের মিলনমেলা শেষ হয়।

শতবর্ষের মিলনমেলার প্রকাশনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বেশ কয়েকটি প্রকাশনা বের করে।

যাত্রিক বিশেষ সংখ্যা

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্মানিত সদস্যদের স্মৃতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত লেখা নিয়ে নিয়মিত যাত্রিকের বিশেষ একটি সংখ্যা মুদ্রণ করা হয়। যা সম্মানিত অ্যালামনাইদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে  দেশের খ্যাতিমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য ১০০ জন অ্যালামনাই-এর লেখা সম্বলিত ‘শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিরোনামে শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। গ্রন্থটির সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। গ্রন্থটি অত্যন্ত তথ্যবহুল ও স্মৃতি বিজড়িত লেখায় পরিপূর্ণ। শতবর্ষের গৌরব, অর্জন, বৈচিত্র্য এবং এমনকি অপূর্ণতা ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্রন্থটিতে।